সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ (Areas of cooperation )
একটি শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে অনেক ধরনের সহায়তার প্রয়োজন । এসব সহায়তা একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনা করতে অনুপ্রাণিত করে। শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো শিল্পোদ্যোক্তাকে যে সাহায্য সহযোগিতা করা হয় তাকে সহায়তার উৎস বলে ।
সহায়তার ক্ষেত্রসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা: উদ্দীপনামূলক সহায়তা, সমর্থনমূলক সহায়তা, সংরক্ষণমূলক সহায়তা ।
সহায়তার ক্ষেত্রসমূহ ( Types Areas of cooperation )
যে কোনো দেশের শিল্পায়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা অপরিসীম । কারণ উদ্যোক্তার কার্যকলাপ দেশের শিল্পের উন্নয়নের সহায়ক । শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা ও ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহায়তার প্রয়োজন হয় । প্রকৃতিগত ধরন অনুযায়ী এদেরকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ।
নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে তা দেখানো হলো:
১। উদ্দীপনামূলক সহায়তা (Stimulatory Assistance)
উদ্দীপনামূলক সহায়তা বলতে ঐ সকল কর্মতৎপরতাকে বোঝায় যা একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে শিল্প স্থাপনে অনুপ্রেরণা জোগায় । শিল্প বা ব্যবসা স্থাপন করা একটি সৃজনশীল, গঠনমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ । যে কারণে অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসতে চায় না। অর্থাৎ ঝুঁকি গ্রহণ করতে রাজি হয় না। যদি কোনো ব্যক্তিকে একথাটি ভালোভাবে বোঝানো যায় যে, বেতন বা মজুরিভিত্তিক পেশার চেয়ে অধিক লাভজনক ও সম্মানজনক পেশা হচ্ছে ব্যবসায় । তাহলে সে ব্যক্তি হয়তো ব্যবসায় বা শিল্পোদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত হবে। উদ্দীপনামূলক সহায়তার উপাদানগুলো হলো- (ক) উদ্যোগ গ্রহণমূলক শিক্ষা (খ) অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ (গ) বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা (ঘ) শিল্প স্থাপনে সরকারি সাহায্য-সহায়তার ব্যাপক প্রচার (ঙ) প্রকল্প প্রণয়ন ও নির্বাচনে সাহায্য ও পরামর্শ দান (চ) কারিগরি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা প্রদান করা (ছ) প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান দেওয়া (জ) নতুন পণ্য ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা ফোরাম গঠন ইত্যাদি ।
২। সমর্থনমূলক সহায়তা (Supportive Assistance)
শিল্প বা ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী কোনো ব্যক্তিকে তার আশা আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য সমর্থনমূলক সহায়তা প্রয়োজন হয় । সমর্থনমূলক সহায়তা একজন শিল্পোদ্যোক্তাকে শিল্প স্থাপন, পরিচালনা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং আরও বহুবিধ প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা পেতে সাহায্য করে ।
সমর্থনমূলক সহায়তাসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নিবন্ধীকরণ বা রেজিস্ট্রিকরণ
(খ) কাঁচামাল সংগ্রহে সহায়তা
(গ) স্থায়ী ও চলতি মূলধনের সংস্থান
(ঘ) শিল্পের অবকাঠামোগত সহায়তা
(ঙ) মেশিনারি নির্বাচন ও সংগ্রহে সাহায্য
(চ) কাঁচামাল সংগ্রহে সহায়তা
(ছ) ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় পরামর্শ দান
(জ) কর অবকাশ ও ভর্তুকি প্ৰদান
(ঝ) পণ্য বাজারজাতকরণে সাহায্য ইত্যাদি ।
৩ । সংরক্ষণমূলক সহায়তা (Sustaining Assistance)
উদ্যোক্তা কর্তৃক শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরও তাকে উৎপাদান কার্য অব্যাহত গতিতে চালিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা বা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে সকল সহায়তার প্রয়োজন হয় সেগুলোকে সংরক্ষণমূলক সহায়তা বলে ।
সংরক্ষণমূলক সহায়তার প্রকৃতি নিম্নরূপঃ
(ক) শিল্প ও ব্যবসায়ের আধুনিকীকরণ
(খ) নতুন কলাকৌশল ব্যবহার
(গ) ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা
(ঘ) পণ্যসামগ্রীর বাজারজাতকরণে সহায়তা
(ঙ) শিল্প সম্প্রসারণে পরামর্শ দান
(চ) উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত অর্থসংস্থান
(ছ) ঋণের সুযোগ সৃষ্টি
(জ) পণ্য বিপণনের নতুন নতুন পন্থা সৃষ্টি ইত্যাদি ।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে । সাহায্য-সহযোগিতা ব্যতীত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় ।
আরও দেখুন...